কোন শ্রেণির গ্রাহকের জন্য কোন হিসাব জরুরি

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - ফিন্যান্সিয়াল কাস্টমার সার্ভিসেস-১ - ব্যাংক হিসাব | | NCTB BOOK
10

ব্যাংক হিসাব হলো আমানতকারী ও ব্যাংকের মধ্যে যোগাযোগ এবং লেনদেনের মাধ্যম। ব্যাংকে মূলত তিন ধরনের হিসাব বিদ্যমান। যথা :

ক. চলতি হিসাব (Current Account );

খ. সঞ্চয়ী হিসাব (Savings Account) এবং

গ. স্থায়ী হিসাব (Fixed Account )

এই তিন প্রকারের হিসাবের মধ্যে কোন শ্রেণির গ্রাহকের জন্য কোন ধরনের হিসাব প্রযোজ্য নিচে তা আলোচনা করা হলো-

ক. চলতি হিসাব (Current account) : ব্যাংক চলাকালীন সময়ে আমানতকারী যে হিসাবের মাধ্যমে দিনে যতবার ইচ্ছা টাকা জমা এবং যতবার ইচ্ছা টাকা উঠিয়ে নেওয়ার সুযোগ লাভ করে তাকে চলতি হিসাব বলে। হিসাব জগতে সব প্রকার হিসাবের মধ্যে চলতি হিসাবের গুরুত্ব ব্যবসায়ীদের নিকট অতি জনপ্রিয়। কারণ এ হিসাবধারীগণ নিচের সুবিধাসমূহ পেয়ে থাকেন—

১. যতবার ইচ্ছা ততবার জমা ও উত্তোলনের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

২. সুদ নয় বরং লেনদেনের সুবিধা প্রদান করাই এর উদ্দেশ্য।

৩. চেক ব্যবহারের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা ।

৪. অর্থ স্থানান্তরের সুবিধা।

৫. জমাতিরিক্ত ঋণের সুবিধা।

৬. যেকোনো পরিমাণ টাকা জমা রাখা যায়।

৭. বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী চেক এবং বিল আদায় ও পরিশোধের সুবিধা পাওয়া যায়।

খ. সঞ্চয়ী হিসাব (Savings account) : সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে যে হিসাব খোলা হয় তাকে সঞ্চয়ী হিসাব বলে। সমাজে চাকরিজীবী, স্থির ও স্বল্প আয়ের লোকেরা সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে এ হিসাব খুলে থাকে। এ ধরনের হিসাবধারীগণ উক্ত হিসাব থেকে নিচের সুবিধাসমূহ পেয়ে থাকে—

১. ন্যূনতম জমার মাধ্যমে হিসাব খোলা হয়।

২. এ হিসাবের মাধ্যমে গ্রাহক অল্প সঞ্চয়গুলোকে জমা রাখতে পারে।

৩. প্রতিদিন অর্থ জমা দেওয়া যায়।

৪. অর্থ প্রেরণ ও সংগ্রহের সুবিধা।

৫. বেতন ও পেনশন উত্তোলনের সুবিধা।

৬. সুদ প্রাপ্তি।

গ. স্থায়ী হিসাব (Fixed account) : সমাজে এমন কিছু লোক আছে যারা ঝুঁকি গ্রহণ করতে চায় না। আবার বিনিয়োগকৃত টাকার নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। ঐসব লোকদের জন্য স্থায়ী হিসাব উপযোগী। এ হিসাবের বিপরীতে নিচের সুবিধাগুলো পাওয়া যায়—

১. এ হিসাবে ব্যাংক আমানতকারীর আমানতের উপর বিভিন্ন হারে সুদ বা মুনাফা দেয়। 

২. এ হিসাবে মুনাফার পরিমাণ অন্যান্য হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি।

৩. এ হিসাবে আমানতের ৮০% পর্যন্ত টাকা ঋণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।

৪. মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে টাকার প্রয়োজনে তা উত্তোলনও করতে পারবে।

৫. যেসব লোকের অলস অর্থ যেমন লটারি জিতার টাকা, পেনশন, সম্পত্তি বিক্রি, বিমা থেকে প্রাপ্ত টাকা পড়ে থাকে তাদের জন্য স্থায়ী হিসাব উপযোগী।

▪️ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকের বিবেচ্য বিষয়সমূহ কী কী ?

১. ব্যাংকের অবস্থান ( Location of bank) : সঠিক ব্যাংক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যক্তিক হিসাব হলে নিজের বাসার কাছে। আর ব্যবসায়িক হিসাবের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক কেন্দ্রস্থল বা শিল্প এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখায় হিসাব খোলা উচিত।

২. দক্ষ ব্যাংকিং (Efficient banking) : ব্যাংকের কর্মচারীদের দক্ষতার ওপর ব্যাংকের সেবার মান নির্ভর করে। কর্মীরা দক্ষ হলে দ্রুত সেবা দিতে পারেন। ফলে গ্রাহকরা দ্রুত সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট হয়।

৩. সেবা (Services) : গ্রাহকরা সবসময় বেশি সেবা দিতে পারে এমন ব্যাংকই পছন্দ করে। তাই বহুমুখী সেবা দিতে পারে এমন ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য বেশি উপযোগী।

৪. বৈদেশিক বিনিময় (Foreign exchange) : ব্যবসায়ীদের জন্য এমন ব্যাংক নির্বাচন করা উচিত যাদের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের অনুমতি আছে। এতে করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করা সহজ হবে।

৫. সুনাম (Goodwill) : হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকের সুনাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যাংকের সুনাম বেশি সেটিকে অধিক নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

৬. অধিক শাখা (More branches) : অনেক শাখা আছে এমন ব্যাংক নির্বাচন করা উচিত। কারণ শাখা বেশি থাকলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে লেনদেন করা সম্ভব।

৭. তালিকাভুক্ত ব্যাংক (Scheduled bank) : তালিকাভুক্ত ব্যাংক অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক থেকে বেশি নিরাপদ। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর তত্ত্বাবধান করে। ফলে জালিয়াতির আশঙ্কা থাকে না।

৮. ঋণ সুবিধা (Loan facility) : ঋণদান নীতি নমনীয় হলে গ্রাহকরা সহজে ঋণ নিতে পারে। তাই ব্যাংক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যাংকটির ঋণদান নীতি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া উচিত ।

৯. সেবার ওপর চার্জ (Charge on service) : প্রতিটি ব্যাংক তাদের সেবার জন্য গ্রাহকদের কাছে অর্থ চার্জ করে। যে ব্যাংকের চার্জ অল্প, সে ব্যাংকে হিসাব খোলা উত্তম।

১০. সুদ (Interest) : ব্যাংক আমানতকারীর জমা করা অর্থের ওপর সুদ দিয়ে থাকে। যে ব্যাংক অধিক সুদ দেয়, সে ব্যাংক গ্রাহকের কাছে বেশি পছন্দনীয়।

১১. ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা (Electronic banking facility) : বর্তমান যুগে ই-ব্যাংকিং ব্যাংক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অঙ্গ। তাই যেসব ব্যাংক এ সুবিধা বেশি দিয়ে থাকে, গ্রাহকরা তাদেরকে বেশি মূল্যায়ন করে।

জেনে রাখো

সঠিক ব্যাংক হিসাব নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়—

১. লেনদেনের প্রকৃতি (Nature of transaction): একজন গ্রাহককে হিসাব খোলার সময় লেনদেনের প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে সঠিক হিসাবটি খুলতে হয়। গ্রাহকের প্রতিদিন টাকা জমা রাখা ও উত্তোলনের প্রয়োজন হলে তার জন্য চলতি হিসাব খোলাই উত্তম। আবার গ্রাহক যদি টাকা জমাতে চান, তাহলে তার জন্য সঞ্চয়ী হিসাব খোলাই উত্তম।

২. সুদ বা মুনাফা প্রাপ্তি (Receiving interest and profit) : সুদ বা মুনাফা প্রাপ্তির বিষয়টিও সঠিক ব্যাংক হিসাব নির্বাচনের ওপর নির্ভর করে। ব্যাংকে টাকা জমা রেখে বেশি সুদ বা মুনাফা পেতে চাইলে তাদের জন্য স্থায়ী হিসাবই উত্তম। কেউ যদি ভুল করে স্থায়ী হিসাবের পরিবর্তে চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাব খোলে, তবে তিনি এ ধরনের সুদ বা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবেন।

৩. ঋণ সুবিধা (Over-draft loans) : যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে জমাতিরিক্ত ঋণ প্রত্যাশা করে তাহলে তার জন্য চলতি হিসাব খোলা উত্তম। সঞ্চয়ী হিসাবের বিপরীতে ঋণ পাওয়া যায় না। কারণ ব্যাংক শুধু চলতি হিসাবের বিপরীতে জমাতিরিক্ত ঋণ মঞ্জুর করে।

৪. সার্বক্ষণিক ব্যাংকিং সেবা (Continuous banking services): যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সার্বক্ষণিক ব্যাংকিং সেবা প্রয়োজন তাদের জন্য চলতি হিসাবই উত্তম। কারণ এ হিসাবের বিপরীতে ব্যাংক চেক, ড্রাফট, বিল বা হুন্ডির অর্থ সংগ্রহ করে। আবার গ্রাহকের পক্ষে বিভিন্ন বিল পরিশোধ, অর্থ আদায়, প্রত্যয়পত্র ইস্যু ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকে। অন্য কোনো হিসাব থেকে এ ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় না।

৫. নিরাপদ সংরক্ষণ (Safe custody) : যারা জমাকৃত অর্থের বেশি নিরাপত্তার প্রত্যাশা করে, তাদের জন্য স্থায়ী হিসাব উত্তম। চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাবে অর্থ জমা রাখলে চেক কেটে সহজেই তা উত্তোলন করা যায়। তাই অনেকের পক্ষে উক্ত হিসাবে অর্থের যথাযথ সংরক্ষণ সম্ভব হয় না। অনেক সময় বাড়তি খরচ বা ধার দেওয়ার ফলে অর্থ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে, যারা নিয়মিত লেনদেনে অভ্যস্ত তাদের জন্য সঞ্চয়ী বা চলতি হিসাব খোলাই উত্তম হবে।

Content added By
Promotion